ভারত থেকে আসা পানির ঢলে ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা

ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা




বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে হঠাৎ করে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, যেখানে বন্যার পানিতে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। হাজারো মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ রয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে, যেখানে ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্টের গেট খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ বেড়েছে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার জানিয়েছেন, এই বন্যা পরিস্থিতি ১৯৮৮ সালের পর এতটা ভয়াবহ হয়নি। বর্তমানে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে উদ্ধারে মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খোয়াই, ধলাই, মুহুরী, হালদা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।




ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এবং ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্টের গেট খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ অঞ্চলে বাড়িঘর, রাস্তা, এবং ফসলি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলাগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি।


প্রচণ্ড পানির চাপে এলাকার অনেক জায়গা তলিয়ে গেছে এবং হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো অঞ্চল বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ রয়েছে, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।


ভারত থেকে আসা অতিরিক্ত পানির প্রবাহের কারণে ফেনী, মুহুরী, কহুয়া, এবং সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে চলে গেছে। নদীগুলোর পানি বাড়তে থাকায় আশেপাশের এলাকাগুলোতে বন্যার পানি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে এবং পানির প্রবাহ না কমে।


স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, এবং কোস্টগার্ড সম্মিলিতভাবে বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে। তারা খাবার, পানি, এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা সরবরাহের চেষ্টা করছে, তবে পরিস্থিতি এতটাই চরম যে অনেক জায়গায় সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।


বন্যার ক্ষতি থেকে বাঁচতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন থেকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে, বিশেষ করে ফেনী, নোয়াখালী, এবং কুমিল্লার মতো অঞ্চলে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি এবং ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক প্রকল্পের গেট খুলে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে পানির প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ফুলগাজী, পরশুরাম, এবং ছাগলনাইয়া উপজেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ এলাকার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। 


উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ড


গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি এবং ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি আরও তীব্র হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক দিলদার হোসেনের মতে, ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, এবং সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে, যা ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার প্রায় সব এলাকা প্লাবিত করেছে।



মঙ্গলবার রাত থেকে স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠন নৌকা ব্যবহার করে পানি বন্দীদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে শুরু করেছে। তবে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় বুধবার সকালে জেলা প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সহযোগিতা চায়। সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা স্পিডবোট নিয়ে দ্রুত উদ্ধারকাজে যোগ দেয়।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীন আক্তার জানান, বন্যাকবলিত এলাকা গুলোর মধ্যে অনেকগুলো সীমান্ত এলাকা, যেখানে পরিস্থিতি এত দ্রুত খারাপ হয়েছে যে, তা সামাল দিতে প্রশাসনকে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দুর্গত এলাকার মানুষদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। 

ত্রিপুরায় ভয়াবহ বন্যা, খুলে দেওয়া হয়েছে জলাধারের গেট

উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে টানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। ত্রিপুরার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, বিশেষত পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার আগরতলা বিমানবন্দরে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিমানবন্দরের মতো উঁচু এলাকাতেও পানি প্রবেশের কারণ হয়েছে।


পশ্চিম ত্রিপুরা ছাড়াও সিপাহিজলা, ধলাই, উত্তর ত্রিপুরা, গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরা ও উনাকোটি জেলাগুলোও আংশিকভাবে বন্যার জলে তলিয়ে গেছে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ‘কমলা সতর্কতা’ জারি করেছে, যা রাস্তাঘাট, নদীনালা, এবং নিচু এলাকার বিপদ সংকেত বহন করে। খোয়াই নদের পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ত্রিপুরার বাংলাদেশ সংলগ্ন খোয়াই জেলায় সর্বোচ্চ ‘লাল সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে।




মধ্য ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের এক দিক থেকে তিনটির মধ্যে একটি গেট ৩১ বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে, যা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না করে বরং আরও অবনতি ঘটিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের কিছু অংশে প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজ্যের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, গেট খুলে দেওয়ার ফলে নদীগুলোর পানির স্তর বেড়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।


ত্রিপুরার ১০টি প্রধান নদীর মধ্যে ৯টি নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এবং রাতে আরও বৃষ্টি হলে বাকি নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানী আগরতলায় প্রায় সব প্রধান সড়ক হাঁটুসমান পানিতে ডুবে আছে, ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় পুরোপুরি ব্যাহত হয়েছে।


পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সাধারণ মানুষকে উঁচু স্থানে বা নিরাপদ আশ্রয়শিবিরে যেতে বলেছে, এবং রাজ্য সরকার প্রাথমিক ত্রাণের কাজ শুরু করেছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এনডিআরএফ সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। ত্রিপুরায় আগামীকাল স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।




No comments:

Powered by Blogger.

Cookies Consent

This website uses cookies to offer you a better Browsing Experience. By using our website, You agree to the use of Cookies

Learn More