বন্যা পরিস্থিতি: যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বহু এলাকা

বন্যার কারণে দেশের অনেক এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় সড়ক ও রেলপথ প্লাবিত হয়েছে, ফলে এসব এলাকার সাথে যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।



    আকস্মিক বন্যায় অনেক এলাকা এখনো যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। এর মধ্যেই কোমরপানি ভেঙে   নিরাপদ  আশ্রয়ের সন্ধানে বন্যাপীড়িত মানুষ। গতকাল ফেনীর ছাগলনাইয়ায়

আকস্মিক বন্যার ফলে ফেনীসহ দেশের ১২টি জেলায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফেনী জেলার সবগুলো উপজেলা এখনো শহর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ ও মুঠোফোন নেটওয়ার্কের অপ্রাপ্যতায় জেলার অনেক গ্রামের অবস্থার সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছে না।


কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার অন্তত ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।


ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণের ফলে দেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। বন্যার কারণে তিন দিনে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। মিরসরাই থেকে ফেনী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়েছে শত শত যানবাহন। সড়কের বিভিন্ন অংশে কোমরসমান পানি জমে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।


বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রশাসন ও ত্রাণকর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেক এলাকার মানুষ এখনো দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে আছেন।






বন্যায় স্থবির হয়ে পড়েছে মহাসড়ক। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পণ্যবাহী গাড়িচালকেরা। অনিশ্চতায় সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। গতকাল দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদরের লেমুয়া এলাকা


**বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ: আটকে পড়া মানুষের আর্তনাদ**


আকস্মিক বন্যার কারণে ফেনীসহ আশেপাশের এলাকায় আটকে পড়েছেন হাজারো মানুষ। নার্গিস আক্তার তাঁর শিশুসন্তানসহ সিলেটে যাওয়ার পথে আটকা পড়েছেন ফেনী সদরের কাছাকাছি। বাসটি গত বৃহস্পতিবার থেকে আটকা পড়ে আছে, যেখানে তিনি ও তাঁর সন্তান কেবল কেক ও বিস্কুট খেয়ে বেঁচে আছেন। তাদের বাসে মোট ৫০ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে সাতজন শিশু। একইভাবে, মোহাম্মদ সাইফুল নামে এক ট্রাকচালকও দুই দিন ধরে মিরসরাইয়ে আটকে আছেন।


গতকাল ফেনীতে দিনব্যাপী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি উদ্ধারকারী দল দুটি স্পিড বোটের মাধ্যমে ৭০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ইভেন মীর জানান, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে, এবং ছাদে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হচ্ছে।


ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর, মোটবী ও ধর্মপুর ইউনিয়নে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল পাঁচটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করে ২০০ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র ও মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছে। তবে অনেক এলাকায় এখনো বহু মানুষ আটকে আছেন। বিশেষ করে ১০ নম্বর ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর টংগিরপাড় হাজিবাড়ি মসজিদ এলাকায় এক পরিবারের সাতজন এখনো আটকা পড়ে আছেন।


কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় গোমতীর বাঁধ ভেঙে ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানে দুই লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে এখনও পানি ঢুকছে লোকালয়ে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও বিশুদ্ধ পানির অভাব ও শৌচাগারের সংকট রয়েছে। গাজীপুর এলাকার গৃহবধূ আকলিমা আক্তারের বাড়িতে পানি উঠে ঘরের চালা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি তাঁর সাত মাসের সন্তানকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানান, তাঁর স্বামী ঢাকায় থাকেন, কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকায় স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।




নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, আট জেলায় পরিস্থিতির উন্নতি



নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং অবস্থার অবনতি ঘটছে। নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কমলেও উজান থেকে পানি আসার ফলে আতঙ্কের মধ্যে আছেন বাসিন্দারা। জেলার আট উপজেলার ২০ লাখের বেশি মানুষ এখনও পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লক্ষ্মীপুরে পানি বেড়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যেখানে পাঁচটি উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন পানির নিচে।



আট জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী নদীর পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। রাঙামাটি ও কক্সবাজারেও পানি নামতে শুরু করেছে। তবে কক্সবাজারে সাগরের জোয়ারের প্রভাব থাকায় পানি দ্রুত নামছে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানি কমলেও কসবায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। হবিগঞ্জে খোয়াই নদের পানি কমলেও এখনও বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।


এদিকে, গত তিন দিনে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনী ও চট্টগ্রামে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ, এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজারেরও বেশি মানুষ।











সরকারি তথ্যমতে, ১১ জেলায় ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার এখনো পানিবন্দী অবস্থায় আছে। উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।



No comments:

Powered by Blogger.

Cookies Consent

This website uses cookies to offer you a better Browsing Experience. By using our website, You agree to the use of Cookies

Learn More